দেশান্তরকালীন অনুভূতিসমূহের ডায়েরী

June 22, 2012

মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য ফান্ডিং কনফার্ম হলো University of Arkansas at Monticello তে। Life-cycle analysis in wood based bio-energy, খটোমটো কিন্তু আমার প্রিয় টপিক (economics of forest and environment) নিয়ে রিসার্চ করার সুযোগ পেয়েছি। অনেক যদি এবং কিন্তু (ভিসা সংক্রান্ত জটিলতা) এখনো বাকি, তবু এটা আমার জন্য একটা বড় খবর। অন্তত এতটুকু আসতে পেরেছি, এটাই বা কম কিসে?

আমার বই VocaBuilder-ও এই মাসেই বের হলো, এবং বেশ ভালো চলছে বলে পাবলিশার জানালো। সব মিলিয়ে জুন মাস ভালোই যাচ্ছে।

July 26, 2012

অত্যন্ত মেধাবী হওয়া স্বত্ত্বেও পারিবারিক ও অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে আমার আব্বু বেশিদূর পড়ালেখা করতে পারেননি। তাই ঠিক করেছিলেন, নিজের ছেলেকে অনেকদূর পড়াবেন। আমার এইচ এস সি’র পর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেতে বসেছিলো টাকা-পয়সার অভাবে, অনেকেই বলেছিলো আমাকে বিদেশে পাঠিয়ে আব্বুর ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য। আব্বু তখন বলেছিলো, যদি সত্যিকার অর্থেই রক্ত-কিডনী বেচতে হয়, সেটা করে হলেও আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন। সেই আমি যখন মাস্টার্স করতে আমেরিকায় যাচ্ছি, এই খবরে এই লোকটার চেয়ে বেশি খুশি এই দুনিয়াতে আর কেউ হয়নি খুব সম্ভবত। আম্মু তো কেঁদেই দিলো, আর ছোট ভাই তো আনন্দের আতিশয্যে মুখর! ছোট্ট ফ্যামিলি থেকে উঠে আসা আমার জন্য এটা তাই অনেক বড় খবর।

ভিসা পেলাম, টিকিট-ও কনফার্ম করলাম। আগামী ৯ই আগস্ট রাতে, আমেরিকার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে রওনা দেবো, দুই বছরের মাস্টার্স প্রোগ্রামের জন্য। হঠাৎ করেই অনুধাবন করলাম, আমি আর মাত্র ১৪ দিন আছি বাংলাদেশে।

মাত্র ১৪ দিন!

১৪ দিনে অন্তত ১৪ সপ্তাহের কাজ করতে হবে আমাকে, মাথার ঘায়ে কুত্তা-পাগল অবস্থা। তবুও এর মধ্যে একটা কাজ না করলেই নয়, সেটা হচ্ছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার। প্রথমেই যে দুজনের নাম নিতে হয়, তারা হচ্ছে আমার ডিপার্টমেন্টের স্যার Mohammad Mahfuzur Rahman এবং আমার বন্ধু Salman B Hosain- এরা দুজন না থাকলে হয়তো এই ধরনের টার্গেটের কথা কল্পনা করার স্পর্ধাও করতাম না। গতকালের ইমেইলে স্যার বললেন, এই সাফল্য ধরে রাখার জন্য আরো পরিশ্রম করে যেতে। মনে থাকবে, স্যার… আর Salman, আসছি তো তোমার কাছাকাছিই, একসাথে মুভি দেখা যাবে মাঝে মাঝে!

Danesh স্যার, Mosharraf স্যার, Mamoon ভাই, Siam ভাই, Saeed ভাই- এরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে সাহায্য করেছেন, মাঝে মাঝে তাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে। আমার NexTop-USA (Higher Study in USA) ফ্যামিলির সবাইকে ধন্যবাদ, যারা এ ধরনের একটা খবরের জন্য অনেকদিন ধরেই অপেক্ষা করছিলেন, বিশেষ করে Irfan ভাই আর Saiful ভাই। আরো অনেকের নাম নেয়া হলো না, কিন্তু আশা করি তারা সবাই এটা ঠিকই জানেন যে আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ! তাদের সকলকে ধন্যবাদ!

August 6, 2012

নেক্সটপ আমাকে অনেক দিয়েছে। আজ, শেষবারের মত যখন নেক্সটপের অফিসে চোখ বোলাতে গিয়ে খুব বিষণ্ন হয়ে গেলাম। এই বয়সে এসে কিছু প্রাণহীন চেয়ার, টেবিল, আর বইয়ের শেলফের জন্য আমার চোখ জ্বালাপোড়া করবে, এটা আমি কখনো ভাবতেও পারিনি – নেক্সটপ আমাকে এই অনুভূতিটা দিয়েছে। নেক্সটপ আমাকে দিয়েছে কিছু অতুলনীয় বন্ধু, আর আজ রাতে বাস স্টেশনে নেক্সটপ আমাকে দিয়েছে এমন এক বিদায়, যা আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা। পুরো বাস কাউন্টার গিজগিজ করছিলো নেক্সটপ পরিবারের সদস্যদের দিয়ে, মাঝরাত হওয়া স্বত্ত্বেও ওরা এসেছিলো শুধু আমাকে বিদায় দেয়ার জন্য!

ধন্যবাদ, আপনাদের সবাইকে। এখন থেকে ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে নেক্সটপের সাথে যুক্ত থাকবো, তবে নেক্সটপ ফ্যামিলির সবার সামনাসামনি উপস্থিতি খুব মিস করবো। ভালোবাসি, আপনাদের সবাইকে।

August 09, 2012

1. Last few hours in my beloved country, BANGLADESH. Wish to see some positive changes when I return. BANGLADESH, take care. . . . .

2. Now on the plane. Air hostess of Emirates, hmmm, really cool! However, I’m just starting the longest (farthest) journey of my life. Remembering the words of BILBO BAGGINS from Lord of the Rings, ”If you don’t step up, you’ll never know where you might have been swept off to. . . . . .”

August 11, 2012

সব মিলিয়ে ৩৮ ঘণ্টার যাত্রা শেষে আমি এখন U, S, and A (USA) তে। আসলে যাত্রা তখনি শুরু হয়েছিলো যখন আমি আমেরিকাতে মাস্টার্স বা পিএইচডি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো (জিআরই, টোফেল) দিয়েছিলাম। সে হিসেব করলে প্রাপ্তিটা অনেক মূল্যবান।

অসামাজিক নামে আমার কুখ্যাতি আছে। আমার মত অসামাজিক একজনের জন্য কিছু কিছু মানুষ এতটা করলো যে আমি চিন্তা করতে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে যাচ্ছি। সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্যগুলোর মধ্যে একজন হচ্ছে, সুবর্ণ (যাকে তিন বছর ধরে প্রাইভেট পড়িয়েছি, আমার পড়ানো সবচেয়ে মেধাবী ছাত্র) এবং তার মা। প্রথম থেকেই আমাকে নিজের ছেলের মতই দেখতেন; যাওয়ার সময় প্রচুর গিফট এর পাশাপাশি যে আন্তরিকতা দেখালেন, সেটা ভোলার মত না।

দীর্ঘ যাত্রাতেও আমার নিজেকে তেমন একট ক্লান্ত মনে হচ্ছেনা। টেক অফ আর ল্যান্ডিং এর সময় এতটা উত্তেজনা ছিলো যে এয়ার সিকনেস টেরই পাইনি। বিমান এত ওপর দিয়ে ওড়ে যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কারণে নিচে শুধু নীল দেখা যায়, নীল সাগরের মত মনে হয়, আর অনেক নিচের মেঘগুলোকে মনে হয় সেই সাগরের ওপর ভাসতে থাকা কাদামাটির দ্বীপ অথবা বরফখণ্ড !

ঢাকা থেকে দুবাই, ওখান থেকে হিউস্টন, হিউস্টন থেকে ফাইন্যালি মনরো এয়ারপোর্টে পৌঁছেই পেয়ে গেলাম Salman B Hosain কে, ৩৬১ দিন পর দেখা হলো আমাদের। বাংলাদেশে অনেকজনকে রেখে আসতে হয়েছে, এসে অন্তত এই পোলা’টাকে কাছাকাছির মধ্যেই পেলাম। বাকীদেরকে বলছি, I am missing you, missing you ALL.

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *