অবশেষে Despacito গানটা ইউটিউবে [১] সর্বোচ্চ সংখ্যকবার দেখা/শোনা গানের তালিকার শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে। আমি জানি না, গানটার মধ্যে আসলে এমন কী আছে, যে কারণে এটা এভাবে জনপ্রিয় হয়ে গেলো! গানটা স্পানিশ ভাষায়, এমনকি ইংরেজিতেও না। তবে mass hysteria যে আসলেই কতটা শক্তিশালী, সেটা সম্বন্ধে একটু আধটু ধারণা আছে দেখে ততটা অবাক হচ্ছি না। অবশ্য আমি এই গানের মাস হিস্টিরিয়া নিয়ে আলাপ পাড়তে আসিনি। ভিন্ন ধরনের কিছু জিনিস আমাকে ভাবাচ্ছে।
গানটা পুয়ের্তো রিকো দেশের শিল্পীদের বানানো। দেশটা কয়েকদিন আগে অর্থনীতিগতভাবে জর্জরিত হয়ে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলো। যদিও এটা USA এর অঞ্চল (territory) হিসেবে গণ্য হয়, তবুও এটা কিন্তু পরিপূর্ণ কোনো অঙ্গরাজ্য (state) নয়। তাই অন্যান্য অঙ্গরাজ্যগুলো ফেডারেল বা সামগ্রিক সরকার থেকে যেসব সুযোগ-সুবিধাগুলো পায়, পুয়ের্তো রিকো সেগুলো পায় না। দেশটা দেউলিয়া হবার পর আমেরিকার ফেডারেল সরকার এটাকে আবার সচল করতে এগিয়ে আসেনি। অনেকে দাবি করেছিলো, এটা পূর্ণাঙ্গ অঙ্গরাজ্যের মর্যাদা দিয়ে দেউলিয়ার অবস্থা থেকে রক্ষা করা হোক।
একটা ব্রডওয়ে থিয়েটার শো “হ্যামিল্টন” দিয়ে রাতারাতি সুপারস্টার হয়ে যাওয়া লিন-ম্যানুয়েল মিরান্দা’ও পুয়ের্তো রিকো নিবাসী। আর “হ্যামিল্টন” এতই বিখ্যাত হয়েছিলো যে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সকেও টিকেটের জন্য হাত-পা ছুঁড়তে হয়েছিলো। জন অলিভারের শো-তে এসে সেই লিন-ম্যানুয়েল রাজনৈতিক নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিলো, যাতে পুয়ের্তো রিকোকে সাহায্য করা হয়। চমৎকার একটা র্যাপ গান করেছিলো সে [২]। কিন্তু কিছুতেই তেমন লাভ হচ্ছিলো না অনেকদিন।
কিন্তু এই একটা গান দিয়ে, এই এক Despacito দিয়ে নাকি দেশের অর্থনৈতিক চাকা ঘুরে যাচ্ছে। এই গানে পুয়ের্তো রিকোর সৈকতের সৌন্দর্য দেখার পর মানুষ সেখানে এসে ভিড় জমাচ্ছে। ট্যুরিস্টরা এসে প্রচুর টাকাপয়সা খরচ করছে, এবং এতে করে সবার কিছু না কিছু অর্থনৈতিক ভাগ্য ফিরছে। Vibe, Guardian, CNN এরকম তথ্য দিয়ে খবর লিখেছে [৩]। একটা গানের কত শক্তি!
বাংলাদেশে এটার একটা প্যারোডি বের হয়েছে – “দেশবাসী তো” [৪]। গানটা শুনে আর দেখে হাসতে হাসতে মাথা খারাপ হবার যোগাড়। বেশ ভালো প্যারোডি করেছে ছেলেগুলো! গানটা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আর হুসেইন মুহাম্মাদ এরশাদকে টিটকারি দিয়ে বানানো হয়েছে। ৫৭ ধারায় জর্জরিত একটা দেশে রাজনীতিবিদদেরকে পচিয়ে এরকম একটা গান বানানোর পরেও কাউকে তোপের মুখে পড়তে হলো না, এটা আমার কাছে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। সার্কাজম এবং ক্রিটিসিজম, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। গানে গানে সমালোচনা করার মাধ্যমে, সৃজনশীলতা মেশানোর মাধ্যমে করেছে বলেই হয়তো শিল্পীদেরকে কারাভোগ করতে হচ্ছে না। তাই, এই প্যারোডি গানটার তুমুল জনপ্রিয়তা আমার কাছে স্বস্তির বিষয়!
ইউটিউবে প্রথমবারের মত বিলিয়ন ভিউ পেয়েছিলো গাংনাম স্টাইল (এখন ভিউ ২.৯ বিলিয়ন) [৫], তখন থেকে এটাই সর্বোচ্চবার দেখা গান ছিলো। হুজুগের আরেকটা নমুনা! তখন View Count দেখানোর জন্য ইউটিউবকে নিজেদের এলগরিদম পাল্টাতে হয়েছিলো, এক বিলিয়ন বা একশো কোটি সংখ্যাটা দেখানোর মত দিন আসবে, সেটা হয়তো গুগল/ইউটিউব আগে ভাবেনি। মাত্র কয়েকদিন আগে সেটাকে পার করে শীর্ষস্থানে উঠে এসেছিলো Wiz Khalifa’র See you again [৬], প্রথমবারের মত তিন বিলিয়ন ভিউ পেয়েছিলো এটা। এই গানটাকে শীর্ষস্থানে দেখতে আপত্তি ছিলো না আমার। কিন্তু সেই সুখ কপালে বেশিদিন সইলো না। এখন দেসপাসিতো’র যুগ চলছে!
লিংকগুলো —
[১] Despacito –https://www.youtube.com/watch?v=kJQP7kiw5Fk
.
[২] লিন ম্যানুয়েল মিরান্দার র্যাপ গান, ১৯ঃ০০ মিনিট থেকে – https://www.youtube.com/watch?v=Tt-mpuR_QHQ
.
[৩] Vibe এর আর্টিকেল – https://www.vibe.com/…/2…/07/despacito-puerto-rico-economy/…
.
[৪] দেশবাসী তো – https://www.youtube.com/watch?v=5TJqoxsoXc4
.
[৫] Gangnam Style – https://www.youtube.com/watch?v=9bZkp7q19f0
.
[৬] See you again – https://www.youtube.com/watch?v=RgKAFK5djSk