Google Pixel 2 আনবক্সিং এবং প্রাথমিক অভিজ্ঞতা

আমি কোনো Tech Reviewer নই। আমি মোবাইল কোম্পানির কাছ থেকে রিভিউ ইউনিট পাই না। ওদের মত অনেক অনেক মোবাইল নিজের হাতে ব্যবহার করে তারপর কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর মত টাকাপয়সা আমার নেই। প্রায় সবার মত আমিও একটা ফোন দুই আড়াই বছর ব্যবহার করি। আমার নোট থ্রি এর অবস্থা বেশ করুণ! এটাও দু বছর ব্যবহার করেছি আমি। পরেরটাও এরকম দুই তিন বছর ব্যবহার করতে চাই। তাই, আমার জন্য কেনার আগেই এটা জানা খুব জরুরি যে, যে ফোনটা আমি কিনবো, সেটাতে আমার চাহিদা মোতাবেক সব থাকবে। কিন্তু কেনার আগে সেটা জানবো কীভাবে? অবশ্যই, গবেষণা করে! যারা আমাকে চেনেন, তারা জানেন, আমার অন্যতম একটা পরিচয় হচ্ছে – আমি বিজ্ঞানী! মোটামুটি সবকিছুকেই বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। তাই, এক্ষেত্রেও বিজ্ঞানভিত্তিক একটা পদ্ধতি অবলম্বন করলাম। Literature review করা শুরু করলাম। গত কয়েকমাস ধরে অন্যান্য টেক রিভিউয়ারদের গণ্ডা গণ্ডা ভিডিও দেখে বুঝলাম, আসলে perfect smartphone বলতে আসলে কিছু নেই। অবশ্য একেকজনের রুচি আর বাজেট অনুযায়ী সবচেয়ে উপযুক্ত ফোন হয়তো আছে। আর ঠিক এই মুহূর্তে আপনার বাজেট যদি হয় ৬৫০ ডলার, তাহলে আমার রিসার্চ অনুযায়ী, আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত ফোন হচ্ছে Pixel 2. তা কোন methodology অনুসরণ করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম, আসুন unboxing করতে করতে সেটাই শুনি।

অনেকেই হয়তো এটা জানেন না যে, পিক্সেল ২ হচ্ছে ই-সিমযুক্ত প্রথম ফোন। গুগলের project Fi নামে একটা নেটওয়ার্ক সিস্টেম আছে, যেটা দিয়ে কল, মেসেজ, ব্রাউজিং, সবই করা যাবে, কোনো বাস্তব সিম-কার্ড ছাড়াই। শুধু project Fi এর ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। আমিও সেটাই করেছি।

যাই হোক, কেনার আগেই যে জিনিসগুলো জানা যায়, সেটা হচ্ছে – অন্যান্য ফ্ল্যাগশিপের মত এটাতেও লেটেস্ট প্রসেসর Snapdragon 835 আছে। সাথে আছে 4 gigabyte র‍্যাম। এটার ৫ ইঞ্চি Full HD রেজোলিউশনের Amoled display (স্যামসাং এর বানানো), আর ওপরে নিচে বেশ বিশাল বেজেল। ২০১৭ সালের ফ্ল্যাগশিপ ফোনে এত বড় বেজেল সাধারণত কেউ রাখে না। পিক্সেল ২ এক্স এল এর ডিসপ্লে ৬ ইঞ্চি, বেজেল ছোটো আর রেজোলিউশন আরো বেশি Quad HD. তবুও সেটা অর্ডার দেইনি, কারণ সেটার দাম ২০০ ডলার বেশি। এবং ওটার ডিসপ্লে LG এর নতুন P-OLED টেকনোলজি দিয়ে বানানো। LG স্যামসাং এর সাথে প্রতিযোগিতা করে এটা বানিয়েছে বটে, কিন্তু এখনো এটা Amoled এর মত নিখুঁত না। ইতোমধ্যেই অনেকে অনেক ধরনের সমস্যার কথা বলছে। তাই, পিক্সেল ২ এক্সেলের P-OLED এর চেয়ে পিক্সেল ২ এর Amoled অনেক নিরাপদ।

কেনার আগেই জানতাম, পিক্সেলের ডিজাইন চোখ কপালে তুলে দেয়ার মত না। কিন্তু এটাও জানি, user experience এর কাছে ডিজাইন সবসময়ই হার মানতে বাধ্য। আমার আগের ফোনগুলোতেও বেজেল ছিলো, কিন্তু আমার মনে পড়ে না যে বেজেলের জন্য কখনো আমার ঘুম হারাম হয়েছে কিনা! আর দীর্ঘদিন গুগল প্রোডাক্ট ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু জানি, user experience এর দিকে গুগলের মনযোগ সবচেয়ে বেশি।

কিন্তু পিক্সেল যেটা সরিয়ে ফেলেছে, সেটা হচ্ছে 3.5 mm headphone Jack। পাইরেটস অফ দ্যা ক্যারিবিয়ান সিরিজের সব কয়টা মুভির মত “জ্যাক” মারা যাচ্ছে সবখানেই, কিন্তু সিরিয়াসলি, গুগল? গত বছর apple কে এটা নিয়ে পচানোর পর এক বছরের মাথায় নিজেও? তবে দুটো জিনিস জানতে পারার পর এই অভিযোগটা করা কমিয়ে দিয়েছি। এক,  প্যাকেটে একটা dongle (ডঙ্গল) আছে যেটা দিয়ে আমি আমার ৩.৫ মিমি. জ্যাক ইউজ করতে পারবো। এবং দুই, এই ডঙ্গলের মধ্যে যে DAC (Digital to Analog Converter) আছে, যেটার জন্য অন্যান্য ডঙ্গলের চেয়ে ভালো সাউন্ড পাওয়া যাবে। LG এর Quad Dac এর মত হবে বলে আমার মনে হয় না, তবে অন্যান্য ফোনের চেয়ে ভালো হবে।

কিন্তু কি আছে এই ফোনে, যেটা এই দামের অন্যান্য ফোনে পাবো না?

এক, latest and greatest android, android O or Oreo. Android P, Q, R – সবার আগে পাবেন এই ফোনে। এলজি বা স্যামসাং এর কোনো ফোনে এই গ্যারান্টি পাবেন না।

দুই, অসাধারণ ক্যামেরা। ভিডিওতে কিছু ছবির স্যাম্পল যুক্ত করেছি।

তিন, গুগল এর নতুন সার্ভিস – গুগল লেন্স। ফোনে থাকা যে কোনো ছবি থেকে তথ্য অনুসন্ধান করা যাবে। এমনকি ক্যামেরাতে যে জিনিস দেখা যাবে, পিক্সেল ২ এর ভিজ্যুয়াল কোর সেটাও চেনার চেষ্টা করবে। পিক্সেল ২ এ ধরনের AI যুক্ত প্রথম চিপ। এটা Oreo 8.1 দিয়ে ইউজ করা যাবে। এরপরেই অবশ্য Huawei Mate 10 ফোনের কিরিন ৯৭০ চিপসেটে এটা যুক্ত করা হয়েছে।

চার, Now Playing সার্ভিস। আশেপাশে কোনো গান বাজলে ফোনের স্ক্রিনে অটোমেটিক গানের আর শিল্পীর নাম দেখা যাবে। এটা অন্য সফটওয়্যার দিয়েও করা যায়, কিন্তু বোমাটা হচ্ছে, পিক্সেল ২ এটা করতে পারে ইন্টারনেট কানেকশন ছাড়াই। WHAT????

পাঁচ, সামনের দিকে দুটো স্টেরিও স্পিকার! অন্যান্য ফোনে এটা হারিয়ে যাচ্ছে। আমি খুশি যে পিক্সেল ২ এ এটা আছে।

ও হ্যাঁ, এই ফোন অর্ডার দিয়ে সাথে একটা Google Homo Mini পেয়েছি, সেটার গল্প অন্যদিন হবে!

তো এগুলো ছিলো ফোন কেনার আগেই যেসব ফ্যাক্টর আমাকে ডিসিশন নিতে সাহায্য করেছে, সেগুলো। ব্যবহার করতে করতে কেমন লাগলো, সেগুলো নিয়ে হয়তো একটা ফুল রিভিউ বানাবো। আজ এ পর্যন্তই। পরবর্তী ভিডিওগুলোর জন্য সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

Share:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *