Zeenat Nahar Artworks এর ছবিগুলো দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কিছু লাইন মাথায় এসেছিলো। Zeenat এর আঁকা ছবি আর আমার লেখা কবিতা নিয়ে এই চিত্রকথন!
(১)
ফুলে উঠছে শিরা, দামাল রক্তের স্রোতে
কড়কড় শব্দের চিড়, মেরুদণ্ডের সেতুতে
হৃৎপিণ্ডের ধুকপুক যেন
দুই পাহাড় হতে ভেসে আসা যুদ্ধের ডংকা
শরীরে সমন্তপঞ্চক কুরুক্ষেত্র
অথবা শিখায় প্রজ্জ্বলিত রাবণের লংকা
আমি সশস্ত্র ঘটোৎকচ, তুমিও একপুরুষঘাতিনী
তবু একসাথে করি স্নান
ওঠে অগ্ন্যুৎপাত লেলিহান, হে দূর ব-দ্বীপবাসিনী!
(২)
অনেক হেঁটেছি আমি তোমাদের শহরে
দাবানল ছড়ানো সূর্যকে উপেক্ষা করে
দেখেছি, তোমাদের দৃষ্টি ছিলো উর্ধ্বপানে
অনুভূতিগুলো হচ্ছিলো ম্লান সন্তর্পণে
কষ্টগুলো জমা হচ্ছিলো বারান্দায়
মিশে যাচ্ছিলো দুধ, চিনি, আর গরম চায়ে
তবুও থামেনি গতি, এখনো শেষ হয়নি প্রতীক্ষা
শহর ছোঁবে আকাশ, দু’চোখে আজো সেই আকাঙ্ক্ষা
(৩)
এসো, আজ স্নান করি ঐ সূর্যের কোলে
প্রাণ ফিরে পাক দেহের প্রতিটা কোষ
গনগনে আঁচ উস্কে দিক মোমের সাহস
গলিত মোম ছিটকে পড়ুক আমার আঁচলে
এসো, পৃথিবীকে দেই তেইশ ডিগ্রী বাঁক
ঝলসে দেই বরফের টাইগা অরণ্য
এখন জানি, তরবারি কাটে না তার খাপ
অগ্নিবর্শাতেই নেভাও কামনার ইনফার্নো
(৪)
আরেকবার করে উঠতে চাই গগনবিদারী চিৎকার
আরো একবার ফুঁসে উঠতে চাই সুনামির গতিতে
আরেকবার চাপা দিতে চাই ভূলুণ্ঠিত হাহাকার
আরো একবার বাঁচতে চাই তোমাদের পৃথিবীতে
(৫)
অনেকটুকু পথের ধূলো লেগে আছে আমার পায়ে,
বিনিময়ে পথকে দিয়েছি আমার ঘাম।
অনেক ফোঁটা রক্ত দিয়ে গড়েছি এই নগর,
প্রতিটি দেয়ালে লেখা আছে আমার নাম।
তরল করেছি আলকাতরা, কঠিন করেছি ইট;
নিজ শরীরের কাব্যে শক্ত করেছি ধনীর ভিত।
প্রমিথিউসের মনে থাকে না যিউসের কোনো ভয়;
মুক্তির আগুন জ্বলবেই, হবে বিদ্রোহীদের জয়।
(৬)
দিন-রাতের হিসেব কেউ রাখেনি বহুকাল
এইখানে এসে থমকে গেছে মহাকাল
আকাশ জ্বলে ওঠেনি সূর্যের আরোহণে
কারফিউ হয়েছে জারি পাখির কলতানে
শুধু আছে স্বপ্নের বুনিয়াদে ঠাসা
তোমার আমার ক্রাইওজেনিক ভালোবাসা…
(৭)
আকাশ ঠিকই বুঝে নিয়েছিলো;
আমার হৃদয়ের গভীরে উঁকি দিয়ে
দেখে নিয়েছিলো বিষাদের কালো।
সেই রঙ শুষেছিলো আকাশের পাটাতন;
ধারণ করেছিলো, কৃষ্ণগহবরের মত
শেষকৃত্যে আসা সদ্য বিধবার আবরণ।
এরপর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হলো বায়ুমণ্ডল;
নেমে এলো বুকের মরুভূমিতে
শত মাইল হেঁটে আসা পিপাসার জল।
ঝরে যাও এই কালো ক্যানভাসের ওপর;
আসুক তামাটে, এরপর ছাইরঙ
অবশেষে, ধীরে ধীরে,
ক্যানভাস জড়িয়ে নিক কাফনের কাপড়
(৮)
নিজের ভেতরে উঁকি মেরে দেখি
শরীরেও বুঝি একটা সূর্য আছে
সেখানেও অবিরাম কথা কয় পাখি
আঁধার নেমে আসে পশ্চিমের সাঁঝে
সেখানেও গাছগুলো ডালপালা মেলে
দিনরাত বয়ে চলে খরস্রোতা নদী
সেখানেও পাহাড় আর বৃষ্টিরা খেলে
জীবনের চক্র চলে নিরবধি
(৯)
আমাকে অন্ধ করে দেয় আলোকের তমসা
মুছে দেয় ঘ্রাণশক্তি নাগরিক বিবমিষা
আমাকে বধির করে দেয় যান্ত্রিক নিনাদ
পাকস্থলীতে চুঁইয়ে পড়ে কৃত্রিম বিষাদ
অলীক থেকে যায় সৌম্য আরেক ধরণী
কল্পনায় চাষ করি পথচলার জ্বালানি