দর্শকদেরকে চরম হতাশ করেছিলো Batman Forever এবং Batman and Robin. আরেকটা ব্যাটম্যান মুভির সংবাদ পোড় খাওয়া দর্শকদেরকে কতটা খুশি করেছিলো, বলতে পারি না। তবে ততদিনে ক্রিস্টোফার নোলান সবার নজরে চলে এসেছিলো Memento আর Insomnia দিয়ে। আর ট্রেইলারটাও ভালোই বানিয়েছিলো। তবুও, ব্যাটম্যান মুভি আর কতই বা ভালো হবে, এই সন্দেহ পোষণকারী দর্শকের সংখ্যা বোধ করি কম ছিলো না। এমনকি সবচেয়ে আশাবাদী দর্শকেরাও বোধ হয় এতটা আশা করেনি যে, Batman মুভির সংজ্ঞা পাল্টে দিতে যাচ্ছে নোলানের ব্যাটম্যান ট্রিলজি।
Batman Begins
Richard Donner আর Jonathan Barry পরিচালিত প্রথম সুপারম্যান মুভিটার সাফল্যের কথা মাথায় রেখে Nolan আর David Goyer এক নতুন ব্যাটম্যান এর ইমেজ নিয়ে আবির্ভূত হলেন। আমার খুব অবাক লাগে, অনেকেই গয়ারের নাম জানে না; অথচ ব্যাটম্যান এবং আপকামিং সুপারম্যান এর নতুন ইমেজের আইডিয়াটা তার মাথা থেকেই বের হয়েছে। প্রথম সুপারম্যানে যেমন প্রতিটা চরিত্রের জন্য নামীদামী অভিনেতাদেরকে আনা হয়েছিলো, চরিত্র যত ছোটই হোক না কেন, এই ব্যাটম্যানও সেই নিয়ম মেনে বিশ্বস্ত কর্মচারী এলফ্রেডের চরিত্রে নিয়ে এসেছে Micheal Caine এর মত শক্তিশালী অভিনেতাকে, লুসিয়াস ফক্স-এর চরিত্রে এসেছে Morgan Freeman, ফ্যালকনির চরিত্রে Tom Wilkinson, আছে ভরাট কণ্ঠের Liam Neeson, গর্ডনের চরিত্রে Gary Oldman, আর ব্যাটম্যান এর ভূমিকায় আমাদের সবার প্রিয়, CHRISTIAN BALE. মেশিনিস্ট এর কাজ শেষ করে ব্যাটম্যানের জন্য তৈরি হতে তাকে কী করতে হয়েছিলো, নিজেই বুঝে নিন।
বাবা-মায়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলো ব্রুস। কিন্তু নিজ হাতে প্রতিশোধ নিতে না পেরে নিজেকে হারিয়ে ফেলে সে। তাকে পথ দেখায় একটি সিক্রেট সংগঠন, তাকে ট্রেনিং দেয়, এবং পরবর্তীতে ব্যাটম্যান হওয়ার জন্য যেসব কলাকৌশল প্রয়োজন, সেগুলো শেখায়। এরপর ঘুণে ধরা গথাম শহরের পুরনো গৌরব উদ্ধার করতে ফিরে আসে ব্যাটম্যান। এরপর শুরু হয় আসল খেলা।
ব্রুস ওয়েইন থেকে ব্যাটম্যান হতে হতে সিনেমার এক ঘণ্টা চলে যায়। আগের ব্যাটম্যান মুভিগুলোতে যে জিনিসটা বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত ছিলো, সেটা BEGINS এ দেখানো হয়েছে, ব্যাটম্যান হয়ে ওঠা। এবং একটা নতুন ট্রেন্ডই শুরু করেছে এই মুভিটা বলা চলে- এরপর Amazing Spiderman-এও এই জিনিস দেখলাম, এমনকি Skyfall-এ জেমস বন্ডের মধ্যেও দেখলাম ছোটবেলার কাহিনী নিয়ে টান মারতে।
স্টাইল ছিলো সেইরকম এই মুভিতে। ব্যাটম্যানের ড্রেস, তার টাম্বলার-এটা গাড়ি নাকি ট্যাংক, কী বলবো বুঝতে পারছি না, একশন, মিউজিক – সব মিলিয়ে এক্স ফ্যাক্টরের জন্য একটা ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে Batman Begins.
The Dark Knight
অনেকাংশে কমে গেছে গথাম শহরের অপরাধ প্রবণতার হার, অপরাধীরা ব্যাটম্যানের ভয়ে রাতে আর বেরই হয়না। শহরের পুলিশ অবশ্য ব্যাটম্যানের পরিচয় বের করতে মরিয়া হয়ে আছে। কিন্তু তাদের যে এ ব্যাপারে কোন ধারণাই নেই, সেটা বোঝানো হয়েছে একটা হিউমার দিয়ে। সন্দেহভাজনদের লিস্টে দেখানো হয়েছে আব্রাহাম লিংকন আর এলভিস প্রিসলি-কে।
ব্যাটম্যান মৌমাছির চাকে ঢিল মেরে দিয়েছে, তার উপস্থিতিতে কিছু করতে না পেরে গথামের ক্রিমিনাল সমাজ এখন বেপরোয়া হয়ে আছে। এখন তাদের একজন ত্রাণকর্তা প্রয়োজন, এবং সেই ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয় THE JOKER.
Batman begins এর শেষের দিকে একটা ইঙ্গিত দিয়ে দেয়, পরবর্তী মুভিতে ভিলেন হিসেবে আসবে, JOKER. দেখার পর থেকেই fingers crossed করে বসে ছিলাম। কিন্তু জোকার যে কী দেখাবে, এটা কখনো কল্পনাও করিনি। যদিও প্রথম ব্যাটম্যান মুভিতে (১৯৮৯ সালে) Jack Nicholson অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়েছিলো, তবুও জোকার চরিত্রে হিথ লেজার ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা করতেও সমস্যা হয় আমার। মুভি মুক্তি পাওয়ার আগেই মারা যায় বেচারা, মুক্তি পাওয়ার পরে ভূষিত হয় মরণোত্তর অস্কার পুরষ্কারে। অনেকে বলে, জোকার চরিত্রটাই তার মৃত্যু ত্বরান্বিত করেছে। এই চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলার জন্য প্রচণ্ড মানসিক চাপ নিয়েছে সে। নোলান নিজেই স্বীকার করেছে, হিথ লেজারের ব্যক্তিগত ইনপুট ছাড়া জোকার চরিত্রটা এই উচ্চতায় আসতে পারতো না। এই চরিত্রের বেশ কিছু ডায়লগ কিংবদন্তী হয়ে থাকবে, যেমন- why so serious অথবা Madness is like gravity, all it needs is a little push. সাধারণত ভিলেনরা চায় টাকা, অথবা ক্ষমতা। জোকার চায় শুধুই নৈরাজ্য, কারণ সে মনে করে, Gotham deserves a better kind of villain.
র্যাচেল চরিত্রে প্রথম মুভিতে ছিলো Katie Holmes, Mad Money মুভি করতে গিয়ে ডার্ক নাইটে সেই রোল করার অফার ফিরিয়ে দেয় সে। এটাই প্রথম সুপারহিরো মুভি যেটা বিলিয়ন ডলার মার্ক ছুঁতে পেরেছে, এমন একটা মুভির অংশ হতে পারতো সে। কে জানে, কয়বার মাথা থাপড়েছে সে।
বেস্ট সাউন্ড এডিটিং এর জন্য অস্কার পেয়েছিলো ডার্ক নাইট, নমিনেশন পেয়েছে আরো ৬টা ক্যাটাগরিতে। স্ক্রিনপ্লে-এর জন্য কেন পেলো না, সেটাই আমার কাছে খুবই অদ্ভুত লেগেছে। ব্যাটম্যানের ভয়েসটা এই মুভিতে একটু বেশিই কর্কশ মনে হয়েছে। মুভিতে ভালো একটা চরিত্র আছে, হার্ভে ডেন্ট! সে পেশায় উকিল এবং গথামকে পরিষ্কার করতে সেও অনেক পরিশ্রম করছে।
আর কাহিনীতে কিছু ভুলভাল আছে। যারা মুভিটা দেখে ফেলেছেন, তারা এই ট্রেইলারটা দেখতে পারেন, চরম মজা পাবেন, Honest Trailer. যাই হোক, আমার মনে হয়, সবাই একমত হবে যে, এটাই ট্রিলজির বেস্ট মুভি। সবচেয়ে ভালো এডিটিং, সিনেমাটোগ্রাফি ছিলো এটাতেই। জোকার এর পর যে জিনিসটা আমার সবচেয়ে বেশি পছন্দ হয়েছে, সেটা হচ্ছে টাম্বলার থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা Batpod.
The Dark Knight Rises
ডার্ক নাইট দিয়ে ব্যাটম্যান সিরিজকে অসামান্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পর ক্রিস্টোফার নোলান কী দেখায়, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম অনেকদিন ধরেই। মুভিগুলোর ভালো প্রিন্ট বাংলাদেশে আসতে দেরি হয়। নোলানের ইনসেপশন দেখেছি মুক্তি পাওয়ার চার মাস পর। তখন আমরা দুই বন্ধু GRE, TOEFL দিয়ে আমেরিকায় হায়ার স্টাডির প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। তখনই উপলব্ধি করলাম, আমেরিকা আসার পেছনে হায়ার স্টাডির কারণটা গৌণ, মুখ্য কারণ হচ্ছে রিলিজ পাওয়ার সাথে সাথেই ভালো মুভিগুলো দেখা। এবং আমরা দুইজন কসম খেয়েছিলাম, Dark Knight Rises একসাথে আমেরিকার সিনেমা হলে বসে দেখবো। এবং ছক্কা! আমেরিকার সিনেমা হলে আমাদের দুইজনের একত্রে দেখা প্রথম মুভি, THE DARK KNIGHT RISES.
৮ বছর ধরে গথাম শহরে শান্তি বিরাজ করছে, হার্ভে ডেন্ট এর পরিশ্রম বৃথা যেতে দেয়নি ব্যাটম্যান। নিজের ওপর সকল দোষ নিয়ে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছে সে, এমনকি ব্রুস ওয়েইন পরিচয়েও কোথাও যায় না সে। নিঃসঙ্গ প্যালেসে র্যাচেল এর স্মৃতিচারণ করে, আর বাটলার অ্যালফ্রেড এর সহায়তায় দিন যাচ্ছে তার। এখন আর ব্যাটম্যান এর প্রয়োজন নেই। কিন্তু এই আট বছর ছায়ার মধ্যে অলস সময় কাটায়নি The League of Shadows. গথাম শহরকে অর্থনীতি দিয়ে ধ্বংস করতে চেয়েছিলো Raas-Al-Ghul. আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নিয়ে তাদের আবির্ভাব ঘটবে এই সিনেমাতে।
পুরো সিনেমা জুড়ে শুধু Jonathan Nolan’এর স্ক্রীনপ্লে এর দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। আর বেস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর এর জন্য আমার ফেভারিট Hans Zimmer. মিউজিক আর স্ক্রীনপ্লে এর জন্য আলাদা মাত্রা পেয়েছে এই মুভিটা…… আর ইতোমধ্যে সবাই জানে, এই সিনেমাতে Catwoman আছে। আমার কখনোই Catwoman এর আইডিয়াটা পছন্দ হয়নি, কিন্তু এখানে সেটার রুপায়ন দেখে (আর স্পেশালি Anne Hathaway এর অভিনয়ে), ক্যাটউম্যান নিয়ে আমার আর কোনো অভিযোগ নেই।
শুধু একটা আফসোস ছিলো, Heath Ledger! ডার্ক নাইটে ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী ভিলেন চরিত্র তৈরি হয়ে গিয়েছিলো, (হয়তো এটা আমার সীমাবদ্ধতা, কিন্তু) এর চেয়ে শক্তিশালী কিছু আমি কল্পনা করতে পারি না। ভিলেন Bane এর চরিত্রে Tom Hardy ফাটাফাটি অভিনয় করেছে। আগের দুটো ব্যাটম্যান মুভিতে তিনজন করে ভিলেন ক্যারাক্টার থাকলেও রাইজেস এ আছে একজনই, BANE.
আরেকজন আছে অবশ্য, কিন্তু একই টীম হওয়াতে আর গোণায় ধরলাম না। জোকার এর চেয়ে বেশি পেশীশক্তি বা অর্থনৈতিক শক্তি নিয়ে কেউ আসতে পারে, যেমন কিন্তু সেই character tone এর চেয়ে বেশি majestic character আসতে সময় লাগবে। তো, যারা জোকার এর ভক্ত, তারা Dark Knight Rises এর ভিলেনের মধ্যে জোকারকে খুঁজতে যাবেন না, তাহলেই বেশি মজা পাবেন।
কাহিনীতেও বেশ কিছু সমস্যা আছে, গোলমাল আছে। এ সকল সীমাবদ্ধতার পরেও সিনেমাটা যেভাবে শেষ হয়েছে, তাতে কারো কোনো অভিযোগ থাকার কথা না। খুবই মুন্সীয়ানার সাথে প্রতিটা চরিত্রকে পরিণতির দিকে এগিয়ে নেয়া হয়েছে। আবারো বলি, জোনাথন নোলান একটা জিনিয়াস,সমাপ্তিটা ছিলো চমৎকার।